কিভাবে মহিলাদের ভুঁড়ি কমানো যায়? মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর উপায়!
পেটের মেদ একটি বিব্রতর বিষয়। ভুঁড়ি আমাদের সৌন্দর্য তো নষ্ট করেই পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। পেটের অতিরিক্ত ভুঁড়ি আমাদের অনেকের জন্যই একটি অস্বস্তিকর বিষয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যে পেটের মেদ বাড়ায় তা নয়। বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়াতে পারে। দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করা, দৈহিক পরিশ্রম কম হওয়ার কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে। অনেকেই পেটের মেদ নিয়ে দুশ্চিন্তা করে থাকেন। কিন্তু পেটের মেদ ছাড়াও শরীরেও মেদ জমতে পারে।
পেটের ভুঁড়ি কি?
পেটের ভুঁড়ি হলো পেটে জমে থাকা এক ধরণের চর্বি। এই চর্বি আমাদের শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। নারী-পুরুষ উভয়েরই পেটে ভুঁড়ি হয়ে থাকে। পেটে ভুঁড়ি থাকলে যেকোনো পোশাক পড়লে বেমানান লাগে।
ভুড়ি কমানোর উপায়
অনেকেই অনেক কিছু পরিবর্তনের সংকল্প নিয়ে থাকেন। ভুঁড়ি কমানো এই তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে। নারী-পুরুষ নির্বেশেষে সকল বয়সের মানুষের একটা বড় সমস্যা পেটের ভুঁড়ি সমস্যা। তাই রোজকার রুটিনে কিছু অভ্যাস যোগ করলে সহজেই দূর করতে পারবেন পেটের ভুঁড়ি সমস্যা। তাড়াহুড়া করে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই বিপদের মুখোমুখি হয়ে থাকেন। শরীরের এই বাড়তি মেদ কিভাবে দূর করা যায় তার কয়েকটি সহজ উপায় আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো-
১। মিষ্টিযুক্ত খাবার খাবেন না
অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত খাবার খাবেন না। আমাদের স্বাস্থ্য এবং ওজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের খাদ্য অভ্যাস। আপনি যদি অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আপনি যদি সত্যিই আপনার পেটের চর্বি বা ভুঁড়ি কমাতে চান তাহলে মিষ্টিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা শুরু করুন। মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে যা আমাদের শরীরে ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই ভুঁড়ি কমাতে আপনাকে অবশ্যই মিষ্টিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
২। প্রচুর পানি পান করা
সুস্থ্য-সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরে প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। কিন্তু শুনলে অবাক হলেও স্বাস্থ্য রক্ষা এবং ওজন কমাতে পানি পানের বিকল্প নেই। পানি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মেদ ঝরাতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এজন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক কোচ ভার্জিনিয়া গ্রুলার বলেন,
”পানি আমাদের ক্ষুধাভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে শক্তি দিয়ে থাকে। মেটাবলিজম এবং হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে থাকে।”
৩। পর্যাপ্ত ঘুম
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম শরীর-মনকে ভালো রাখে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে। সুস্থ্য থাকতে হলে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুম মানুষের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে পেটে মেদ জমতে পারে। তাই দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা না ঘুমালে দিনের বেলা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
সুতরাং এটি নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে পারছেন। ঘুম ভালো হলে শরীরে মেদ কম জমে এবং জমানো মেদও ঝরতে সাহায্য করে থাকে। তাই ঘুমের রুটিন ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনি চাইলে ফিটনেস টেইনারের সাহায্য নিতে পারেন।
৪। সাদা ভাত
সাদা ভাত কম খান। আমরা মাছে ও ভাতে বাঙালি। আমরা ভাত খেতে বসলে আর কম করে খাই না। বিশেষ করে গ্রামে এটি বেশী দেখা যায়। তারা যেমন কাজ করে তেমন খায়। সাদা চাল এবং সাদা আটা তৈরি করার সময় ফাইবার বা আঁশসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফেলে দেয়া হয়। ফাইবার দেয়ার কারণে খাবারগুলো দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সাদা চাল ও সাদা আটার মত প্রক্রিয়াজাত শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে মেদ জমার সম্পর্ক রয়েছে। ভাত বেশি খেলে শরীর ছেড়ে দেয়। তাই সাদা ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথমে রুটি খেতে অস্বস্তি মনে হবে। তাই আস্তে আস্তে এগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৫। ব্যায়াম করা
শুয়ে-বসে থাকলে যে শরীরের চর্বি জমে তা প্রায় সকলেরই জানা। এর সহজ সমাধান হলো সারা সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘন্টা ব্যায়াম করেই আপনি অনেক উপকার পাবেন। এতে রোগব্যাধির সম্ভাবনা কমবে এবং শরীরের চর্বির পরিমাণও কমবে। জিমে না গিয়েও ঘরে বসে ব্যায়ামের উপকরণের সাহায্য ছাড়াও মেদ কমানোর ব্যায়াম শুরু করা যায়।
পেটের ভুঁড়ি কমানোর জন্য ধীরে ধীরে হাঁটুন তারপর গতি বাড়িয়ে দৌড়ান। এতে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হবে এবং চর্বি কমতে সাহায্য করে থাকবে। তাই ভুঁড়ি কমাতে ব্যায়াম করার গুরুত্ব অপরিসীম।
৬। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবন-যাপনের মাধ্যমে আমরা শরীরের বাড়তি মেদ বা ভুঁড়ি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। লালা চাল ও আটার তৈরি খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ আঁশ পাওয়া যায়। গ্রিন-টি পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর।
তাই দুধ ও চিনি দিয়ে চা পানের অভ্যাস পরিবর্তন করে গ্রিন-টি পান করুন। আবার খাওয়ার সময়ে পেটে একু জায়গা রেখে খাওয়ার চেষ্টা করুন। ফলে খাবার ভালো হজম হবে। তাই যখন খেতে বসবেন তখন পেটকে তিনটি ভাগে ভাগ করবেন। এক ভাগে থাকবে খাদ্য, এক ভাগে থাকবে পানি এবং অন্য ভাগটি থাকবে ফাঁকা। এর ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরির সমস্যাও হবে না।
৭। মানসিক চাপমুক্ত থাকুন
দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের যেসব ক্ষতি করে থাকে তার মধ্যে একটি হলো আমাদের ওজন বাড়িয়ে তোলে। উচ্চ মাত্রায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে চিনিজাতীয় ও ফ্যাট জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। এর ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষ করে পেটের চর্বি বৃদ্ধি পায়। আবার মানসিক চাপের ফলে নানা রকম সমস্যার তৈরি হতে পারে।
তাই আপনি বই পড়া, হাঁটা-হাঁটি কিংবা শরীর চর্চা অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে পারেন। তাই আপনাকে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই জরুরী।
FAQS-
# পেটের ভুঁড়ি কি কমানো যায়?
=> একবার পেটে মেদ জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না এ ধারণাটি ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্থ হলে সহজে মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
# কেন পেটের মেদ বাড়ে?
=> অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া পেটের মেদ বাড়ানোর একমাত্র কারণ। তাই নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে পেটের ভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
# কিভাবে ভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করবেন?
=> ভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। গ্রিন-টি মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর। খাওয়ার বিষয়ে একটু ডাইট প্ল্যান মেনে চলুন।
শেষ কথা
পেটের ভুঁড়ি বা চর্বি একটি বিব্রতকর বিষয়। কেউ এটি আশা করে না। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ভুঁড়িকে কমানো সম্ভব। আমরা আশা করবো এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি পেটের ভুঁড়ি বা মেদ কমানোর উপায়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আপনার যদি ভুঁড়ি বেড়ে থাকে তাহলে এই টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন। আপনি অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন।
# কিভাবে মোটা হওয়া যায়? মোটা হওয়ার সহজ উপায়! # কিভাবে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারি? পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়!